এর মধ্যে আছে মনিটরি পলিসি ,তদারকি ব্যবস্থা, অভ্যন্তরীন ব্যবস্থাপনা। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যেই চালু হয়েছে ই-কমার্স, ই-ব্যাংকিং সহ অটোমেটেড কিয়ারিং হাউজের ব্যবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ডক্টর আতিউর রহমানের বরাতে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল রূপে আসতে ৫ বছরের একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিশ্ব মানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পরিণত করতে ব্যাংকের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও জোর দিতে হয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি কাগজের ব্যবহারবিহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে।
ই-কমার্স
বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রযুক্তির প্রচলনের প্রথম ধাপেই ই-কমার্স চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই ব্যবস্থা চালুর মধ্য দিয়ে অনলাইনেই অর্থের আদান-প্রদান ,প্রয়োজনীয় বিল পরিশোধ, আমদানি-রপ্তানি, ফান্ডের স্থানান্তর, অনলাইন ক্রেডিট কার্ড, স্থানীয় মুদ্রা সরবরাহের মতো জটিল কাজগুলো সহজেই নিমেষেই সমাধান সম্ভব।
ই-পেমেন্ট
ই-কমার্স ছাড়াও ব্যাংকের গ্রহণ করা প্রযুক্তির মধ্যে ই-পেমেন্ট বা নগদ অর্থের আদান-প্রদান অন্যতম। এখন এন্টি-মানিলন্ডারিং আইন সহ এই সংক্রান্ত অন্যান্য আইন মেনেই লেনদেন করা হচ্ছে। এখন দেশের অভ্যন্তরীন ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে অর্থের আদান প্রদান ও সরবরাহ হয়ে গেছে অনেক সহজ। এর ফলে ভবিষ্যতে ইলেকট্রনিক ফান্ড স্থানান্তর এর কাজটিও সহজেই করা সম্ভব হবে ।রেমিটেন্স
সম্প্রতি চালু করা ‘ইনস্টলেশন অফ বাংলাদেশ অটোমেটেড কিয়ারিং হাউজ’ (বিএসিএইচ) বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা বলেই দাবি করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এতে রেমিটেন্স চ্যানেল ও পেমেন্ট পদ্ধতিকে সহজ করা সম্ভব। এই পদ্ধতি ২০০৯ এর নভেম্বরে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। এই পদ্ধতিতে চেক দিয়ে ব্যাংক থেকে অর্থ তুলতে সরাসরি উপস্থিত হবার প্রয়োজন পড়ছে না। এতে চেকের তথ্য বাংলাদেশ অটোমেটেড চেক প্রসেসিং সিস্টেমে (বিএসিপিএস) একটি নিরাপদ সংযোগ পথ তৈরি করবে।চেক
প্রচলিত নতুন চেকগুলোতে থাকছে ম্যাগনেটিক ইঙ্ক ক্যারেক্টার রিকগনিশন (এমআইসিআর) লাইন যা ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট বিষয়ক সকল তথ্য ধারণ করে রাখতে পারবে। এই পদ্ধতিতে সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি বাড়বে নিশ্চয়তাও।
মোবাইল ব্যাংকিং
মোবাইল ফোন অপারেটরদের বরাতে জানা গেছে, সেল ফোন ব্যবহার করে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যংক। মোবাইল ব্যবহারকারী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে চুক্তিকারী বিভিন্ন অপারেটরের সংযোগসহ মোবাইল সেট ব্যবহার করেই নিজস্ব অ্যাকাউন্টের তথ্য জানা সম্ভব হবে । এর মধ্যেই তিনটি কমার্শিয়াল ব্যাংক এই মোবাইল ব্যাংকিং চালু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশব্যাপী কৃষি ও এসএমই লোনের তদারকি ও খোঁজখবর রাখতে এই সেবা চালু করেছে।
সিআইবি
অনলাইন ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি বছরে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট নিয়ে একটি ডেটাবেজ তৈরি করা হবে এবং সেসব উপাত্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাজে লাগবে।
বিভিন্ন নেটওয়ার্ক স্থাপন
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের বরাতে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পূনর্গঠন করার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মিলিয়ে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে আছে নেটওয়ার্কিং, ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশন, এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং সলিউশন, এন্টারপ্রাইজ ডেটা ওয়্যারহাইজ ইত্যাদি ব্যবস্থাকে একটি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার মধ্যে আনা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক এর প্রধান অফিসের সব শাখা ও অন্যান্য নয়টি শাখার সব কম্পিউটার একটি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার মধ্যে আনা হয়েছে যার ফলে প্রায় ৩ হাজার কম্পিউটারকে একত্রে যুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
এন্টারপ্রাইজ রিসোর্সেস প্ল্যানিং
ইআরপি এর মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ই-প্রোকিউরমেন্ট, ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট, অ্যাক্সেস কন্ট্রোলসহ সব পরিবর্তন করা যাবে। এমনকি ব্যাংকের নিয়োগ বিধিও ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করা হচ্ছে।এন্টারপ্রাইজ ডাটা ওয়্যারহাউজ
এটি একটি ইলেকট্রনিক ডেটা ব্যাংক তৈরি করে যা অর্থ বিষয়ক সব তথ্যের যোগান দেবে। এটি ব্যবহার করে ব্যাংকের নীতি বিশ্লেষণ করা যাবে।ই-টেন্ডার
বাংলাদেশ ব্যাংক ওয়েবভিত্তিক ই-টেন্ডারিং সিস্টেম চালু করছে। ফলে টেন্ডার ঘোষণা, শিডিউল বিতরণ, নিলামসহ সবকিছু অনলাইন কার্যক্রমের আওতায় আনা হচ্ছে।অন্যান্য কার্যক্রম
বাংলাদেশ ব্যাংক এর অধীনে থাকা অন্যান্য ব্যাংক ও অর্থনৈতিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রমও তদারকি করছে। এছাড়াও সৌরশক্তি ব্যবহার করে গ্রিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর উৎসাহ ও বিভিন্ন সাহায্য দিচ্ছে।ব্যাংকের গভর্ণর ডক্টর আতিউর রহমানের বরাতে জানা গেছে, ‘দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংককে কাগজের ব্যবহারহীন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনলাইন ভিত্তিক করা হবে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে কৃষি ও এসএমই খাতে তথ্য ও যোগাযোগ খাতকে ব্যবহার করা হবে। এটিকে স্বয়ংক্রীয় করতে এর মধ্যেই নেয়া হয়েছে বিভিন্ন ব্যবস্থা’।
গভর্ণর এর বরাতে আরো জানা গেছে, তিনি জানিয়েছেন, ‘জাতীয় প্রবৃদ্ধির ফসল আমরা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই’। আর সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া ডিজিটালকরণের প্রক্রিয়াকে ঐতিহাসিক একটি পদক্ষেপ বলেই জানিয়েছেন তিনি। আইসিটি ব্যবহার করে অর্থনৈতিক উন্নতি আনতে ব্যাংকের ডিজিটালকরণ জরুরী বলেই তিনি মনে করছেন । প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি ও এসএমই এর মতো ব্যবস্থাও সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে বা নাগাল পেতে বাংলাদেশ ব্যাংক সাহায্য করছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
গভর্নর আরো জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের করা এক জরিপে দেখা গেছে প্রযুক্তি ব্যবহারকারী ব্যাংকগুলো ঝুঁকিমুক্ত ও লাভজনক হচ্ছে। তাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটির তদারকি আরো বাড়ানো গেলেই অর্থনৈতিক ভিত্তিটি মজবুত হবে বলেই তিনি তার মত প্রকাশ করেছেন।
- bdnews24.com

0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন